-
Book Title: শ্রীমদ্ভাগবত ও ভাগবত জীবন
-
Language: Bengali
-
Post Date: 2025-04-12 18:08:31
-
PDF Size: 0.89 MB
-
Book Pages: 164
-
Read Online: Read PDF Book Online
-
PDF Download: Click to Download the PDF
- Tags:
শ্রীমদ্ভাগবত ও ভাগবত জীবন
More Book Details
Description of the Book:
<
শ্ৰীশ্রীগৌরাঙ্গবিধুর্জয়তি
ভূমিকা
আরাধ্যো ভগবান্ ব্রজেশ-তনয়স্তদ্ধাম বৃন্দাবনং রম্যা কাচিদুপাসনা ব্রজবধুবর্গেণ যা কল্পিতা ।শাস্ত্রং ভাগবতং প্রমাণমমলং প্রেমা পুমর্থো মহা-নিত্থং গৌর-মহাপ্রভোর্মতমতস্তত্রাদরো নঃ পরঃ ।।
কেবলমাত্র ষড়ৈশ্বর্য্যে পরিপূর্ণ শ্রীমন্নন্দনন্দন এবং তাঁহার ধাম বৃন্দাবনই একমাত্র আমাদিগের আরাধ্য । শ্রীমতী ব্রজবধুগণ কর্ত্তৃক অনুষ্ঠিতা তাঁহার রম্যা উপাসনাই একমাত্র উপাসনা, পুরাণশ্রেষ্ঠ,পুরাণ শিখামণি অমল পুরাণ শ্রীমদ্ভাগবতই শাস্ত্র এবং প্রেমসম্পত্তিই একমাত্র মহান্ অর্থ । আরাধ্য, উপাসনা, শাস্ত্র এবং অর্থ বলিতে উপরোক্ত চতুষ্টয়কেই একমাত্র গ্রহণ করিবে, অন্যকিছু কখনও স্বীকার করিবে না । শ্রীমচ্ছচীনন্দন শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর ইহাই মত এবং এই মতকেই আদর করিবে । এই মতের অনুগত হইয়াই রাগমার্গীয় ভজনাদি করিবে । এই মত ভিন্ন অন্যমতকে কদাপি স্বীকার করিবে না ।
ভগবৎ কৃপাই হইল মুখ্যবস্তু । কৃপাই একমাত্র ভরসা । ভগবৎ কৃপা ব্যতীত দৈন্যোৎপন্না প্রেমভক্তি কদাপি প্রাপ্ত হইবে না । সেহেতু কৃপাকে মুখ্য করিয়াই সাধন ভজন করিলেই প্রেম লাভ হইয়া থাকে । প্রেমলাভের পরবর্তীতে ভজন সাধনের ফলস্বরূপ শ্রীভগবান এবং তাঁহার পরিকরগণের দর্শন লাভ হইবে, তদনন্তর শ্রীভগবানের মাধুর্য্য অনুভব হইবে এবং পরিশেষে নিত্যলীলায় সেবা লাভ করিবার সুযোগ প্রাপ্ত হইবে । কৃষ্ণ সেবাই আমাদের একমাত্র সাধ্য ।
এই কৃষ্ণসেবা লাভ করিতে হইলে একটি বিশিষ্ট জীবন গঠন করিতে হইবে, সেই বিশিষ্ট জীবনকেই ভাগবত জীবন বলিয়া আখ্যা দেওয়া হইয়াছে । এই ভাগবত জীবন গঠন করিতে হইলে ভাগবত
ধর্মের অনুশীলন করিতে হইবে । ভাগবত ধর্ম্মের অনুশীলন করিতে করিতে সাধকের ক্রমোন্নতি হইবে এবং এক পর্য্যায়ে সাধকদাস নিশ্চই কৃষ্ণসেবা লাভ করিতে সক্ষম হইবে ।
শাস্ত্র বলিতেছে যে–আদৌ শ্রদ্ধা ততঃ সাধুসঙ্গোঽথ ভজনক্রিয়া ।ততোঽনর্থ নিবৃত্তিঃ স্যাত্ততো নিষ্ঠা রুচিস্ততঃ ।।অথাসক্তিস্ততো ভাবস্ততঃ প্রেমাঽভ্যুদঞ্চতি । সাধকানাময়ং প্রেম্ণঃ প্রাদুর্ভাবে ভবেৎ ক্রমঃ ।।
অর্থাৎ শাস্ত্রানুমোদিত বাক্যে শ্রদ্ধা , সর্বার্থ সিদ্ধিপ্রদায়ক সাধুসঙ্গ, শ্রবণ-কীর্তনাদির অনুষ্ঠান তথা ভজন ক্রিয়ার দ্বারা সকল অনর্থ নিবৃত্তি হইয়া যায় । শ্রদ্ধা হইতে আরম্ভ করিয়া শ্ৰী গুরুপদাশ্রয়, ভজনক্রিয়া প্রভৃতি বিভিন্ন স্তরের মধ্য দিয়া অগ্রসর হইয়া প্রেম লাভের পর এই প্রাকৃত পাঞ্চভৌতিক সাধক দেহের অবসান হইয়া থাকে । পাঞ্চভৌতিক দেহাবসানের পরবর্তীতে সাধকদাস সিদ্ধ চিন্ময় গোপী দেহে নিত্যলীলায় প্রবিষ্ট হইয়া স্নেহ মান প্রণয় প্রভৃতির পর মহাভাব কক্ষায় উঠিয়া বিশিষ্ট প্রেম সেবা লাভ করিয়া থাকে ।।
সাধনের বিরাম নাই । পরন্তু সাধন করিবার পদে পদে বিঘ্ন রহিয়াছে । যে বিঘ্নগুলির জন্যই সাধকদাস ভজন-সাধন করিয়াও অগ্রসর হইতে পারে না । প্রায়শঃ অপরাধজনিত কারণেই সাধকদাসকে বিঘ্নগুলির মুখোমুখি হইতে হয় । বিভিন্ন অপরাধ সমূহের মধ্যে সাধুগণের নিন্দাই সর্বাপেক্ষা বিশিষ্ট ভজনবিঘ্নকারী । এই গ্রন্থে সাধকদাসের সাধনপথের বিঘ্ন, ভজনমার্গের অনর্থনিবৃত্তি, অপরাধ ও তাঁহার নিবারণ করিবার উপায়াদি এই সকল বিষয় বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হইয়াছে ।যদ্যপি অামাদের জন্ম হইয়া থাকে প্রাকৃত জগতে, পরন্তু অভিসার হইয়া থাকে অপ্রাকৃত জগতে, মিলন এবং সেবা
প্রাপ্তি হইয়া থাকে নিত্যলীলায় । প্রাকৃত জগতে জন্ম লইয়া, প্রাকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হইয়া প্রাকৃত চিন্তাধারায় পুষ্ট হইয়া প্রাকৃত আচরণ দ্বারা কখনই কেহ সাধ্য বস্তুকে লাভ করিতে পারে না ।
কেবলমাত্র অপ্রাকৃত শিক্ষা, অপ্রাকৃত চিন্তা ও অপ্রাকৃত আচরণ দ্বারাই অপ্রাকৃত সাধ্য বস্তু লাভ করিতে পারা যায় । সেই জন্যই আমাদিগকে অপ্রাকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হইতে হইবে । অপ্রাকৃত শিক্ষা লাভ করিবার জন্য সদ্গুরু আশ্রয় করিয়া তাঁহার নিকট হইতেই সেই শিক্ষাকে অর্জন করিতে হয় । সদ্গুরু কে ? এই সম্বন্ধে গুরুতত্ত্ব প্রকাশিকাদি গ্রন্থাদিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হইয়াছে । আমাদের সাধনের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য হইতেছে অপ্রাকৃতে জগতে প্রবেশ করা ও চিন্ময়ত্ব প্রাপ্তি ।
প্রশ্ন হইতেছে, কে আমাদের শিক্ষা প্রদান করিবে ? কে আমাদের স্বাভাবিক চিন্তা ও আচরণের ধারা হইতে মুক্ত করিয়া চিন্ময় জগতের শিক্ষা, চিন্তা এবং আচরণের দিকে চক্ষু উন্মিলিত করিয়া দিবে—যাহাতে বিঘ্ন রহিত হইয়া আমরা আমাদের সাধ্য বস্তুকে লাভ করিতে পারি ।
ইহার উত্তর হইতেছে যে, শ্রীমদ্ভাগবতই আমাদেরকে এই শিক্ষা তথা সঠিক মার্গ দেখাইবে । শ্রীমদ্ভাগবতই আমাদের শিক্ষাগুরু, পথপ্রদর্শক, উপদেষ্টা এবং নিরুপাধিক হিতকারী । সুতরাং শ্রীমদ্ভাগবতকেই নিজ জীবনে বরণ করিয়া লইতে হইবে । শ্রীভগবান ও ভক্তের চরিত কথা তাঁহাদের শিক্ষা ও উপদেশ ইহাই আমাদের সাধনমার্গের পাথেয় ।
ভাগবতোচিত আচরণই হইতেছে মুখ্য বস্তু । সাধ্যবস্তুকে লাভ করিতে হইলে ভাগবতোচিত আচরণ
করিতে হইবে । আমাদের আচরণ যদি ভাগবতোচিত না হইয়া থাকে তাহা হইলে নিশ্চই ভজনমার্গে বিঘ্ন আসিয়া উপস্থিত হইবে । সাধকদাস যদি ইহ জগতে ভাগবতোচিত আচরণ করিয়া নিজেকে তদ্রুপে গঠন করিয়া থাকে তাহা হইলে নিশ্চই তাঁহার ভজনমার্গে বিঘ্ন আসিয়া উপস্থিত হইবে না । ভাগবতোচিত আচরণের দ্বারা সাধকদাস তৃণাদপি সুনিচেন তরোরিব সহিষ্ণুনাবৎ হইতে পারে এবং সহজেই অনর্থগুলিকে দূরীভূত করিতে পারে । এই আচরণের দ্বারা সাধু-মহাত্মা, বৈষ্ণবজনাদিকে সন্তুষ্ট করিয়া সহজেই তাঁহাদিগের কৃপা লাভ করা যায় । বৈষ্ণবকৃপা ভগবৎ প্রাপ্তি করাইতে অবশ্যই সক্ষম । সকল ভূতের মধ্যে ঈশ্বর বিরাজমান্ শাস্ত্র বলিতেছে যে , ‘ঈশ্বর সর্বভূতানাম্’ । শাস্ত্র আরও বলিতেছে যে আত্মবৎ সর্ব ভূতেষু অর্থাৎ আত্মবৎ সকল ভূতের প্রতি ব্যবহার করিতে হইবে । সকলভূতে ঈশ্বর রহিয়াছেন এই ভাবিয়া কদাপি তাহাকে অবহেলা তথা কষ্ট প্রদান করিবে না । কারণ ভূতমাত্রে অবহেলন ভজন নষ্ট করিয়া থাকে অর্থাৎ অপরাধের জন্ম দিয়া থাকে, যাঁহার ফলে ভজন মার্গে নানা বিঘ্ন আসিয়া উপস্থিত হয় এবং সাধকদাসকে অশান্ত করিয়া থাকে তথা পীড়া প্রদান করিয়া থাকে । একদিকে যেমন অপরাধ বর্জ্জনের সাধন, অন্যদিকে তেমনি আছে সেবার আকাঙ্ক্ষা এবং সেবারূপ পরিপাটির সাধন । অপ্রাকৃত জগতে শ্রীভগবান এবং তাঁহার পরিকরগণ হইতে আরম্ভ করিয়া জীব জগতে ক্ষুদ্র হইতে মহান সকলের প্রতিই যথোচিত সেবা করাই হইতেছে সেবা বিধানের সাধন । সকল জীবের ভিতরেই শ্রীভগবানের অধিষ্ঠান এবং একই
পরমাত্মা কতৃক সকল জীব নিয়ন্তৃত, সেই জন্য একই প্রীতি সূত্রে সকলেই গ্রথিত । যেখানে প্রীতি সেখানেই সেবা নির্দ্ধারিত ।
ভাগবতজীবন গঠনে মূল ভিত্তি হইতেছে শুদ্ধাভক্তির সাধন এবং সকল প্রকার অপরাধ বর্জ্জন । ভাগবত জীবন কিভাবে গঠন করিতে হইবে তাহা সুচারুরূপে এই গ্রন্থে বর্ণনা করা হইয়াছে । এই গ্রন্থে বর্ণিত প্রণালী অনুসারে যদি সাধকদাস নিজেকে গঠন করিয়া থাকে তাহা হইলে নিশ্চই সাধকদাস ভাগবতোচিত আচরণ করিতে সক্ষম হইয়া নিত্যলীলায় সেবা প্রাপ্তি করিতে পারিবেন । ভাগবত জীবন গঠন করিতে এই গ্রন্থখানির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম । আশা করিতেছি যে, সাধকদাস গ্রন্থখানি অাস্বাদন করিয়া নিজেকে গ্রন্থানুসারে গঠন করিয়া ভগবৎ ভজনে তৎপর হইবেন ।
এই গ্রন্থখানি তৎকালিন সময়ে ভজননিষ্ঠ বৈষ্ণবগণ কর্ত্তৃত অতীব সমাদৃত হইয়াছিল । পরন্তু পরবর্তীতে বৈষ্ণবসমাজে গ্রন্থখানির অভাববোধ হওয়ায় পুনরায় তাঁহার প্রকাশন করিবার প্রয়োজন হইয়া পড়ে । শ্রীশ্যামসুন্দর দাসজীর অনুপ্রেরণায় তথা নির্দেশে আমি পুনরায় শ্রীঅমরসেন দাস বাবাজী মহারাজ কর্ত্তৃক সঙ্কলিত এই গ্রন্থের সম্পাদনা করিয়াছি । গৌড়ীয় প্রকাশন কর্ত্তৃক এই গ্রন্থখানির পুনরায় প্রকাশন করা হইল । এই গ্রন্থখানির “ প্রুফ ” দেখিতে শ্রীসনাতন দাস শাস্ত্রীজী মহারাজ সহায়তা করিয়াছেন সেহেতু তাঁহাকে আমি আন্তরিকভাবে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করিতেছি ।
নিবেদক রঘুনাথ দাস
- Creator/s: পণ্ডিত শ্রীরঘুনাথ দাস শাস্ত্রী
- Date: 1/23/2021
- Book Topics/Themes: শ্রীমদ্ভাগবত এবং ভাগবত জীবন
Leave a Reply